রেলওয়ে হাসপাতালের অনিয়ম দুর্নীতি অনুসন্ধান পর্ব-১

ঘুষে পদোন্নতি দিত রেলের প্রধান চিকিৎসা কর্মকর্তা ইবনে শফি

Passenger Voice    |    ০৫:২৫ পিএম, ২০২০-১২-২৪


ঘুষে পদোন্নতি দিত রেলের প্রধান চিকিৎসা কর্মকর্তা ইবনে শফি

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ মো. ইয়াছিন ভুঁইয়া। ২০১৫ সালের ১৯ মে এস/খালাসী পদে যোগ দেন বাংলাদেশ রেলওয়েতে। তবে তিনি স্বপ্ন দেখতেন জুনিয়র নার্স হয়ে রেলের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সেবা করার। তবে এস/খালাসী পথ থেকে এই পদে পদোন্নতির কোন সুযোগ না থাকলেও মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে অবৈধ পন্থায় তাকে এই পদে পদোন্নতির ব্যবস্থা করে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের প্রধান চিকিৎসা কর্মকর্তা তৎসময়ের চট্টগ্রাম বিভাগীয় চিকিৎসা কর্মকর্তা ডাঃ ইবনে সফি আব্দুল আহাদ। তবে এখানে শেষ নয় এই ডাক্তারের সহযোগী হিসেবে ছিলেন বিভাগীয় চিকিৎসা কর্মকর্তা পাহাড়তলীর ডাঃ চিন্ময় বিশ্বাস। এই ডাক্তার মো. ইয়াছিন ভুঁইয়াকে পদোন্নতিযোগ্য বলে সুপারিশ করেছিলেন। 

বিষয়টি দীর্ঘদিন ধামাচাপা পরে থাকলেও হটাৎ রেলওয়ে মেডিকেল বিভাগের বিভিন্ন দপ্তরে এমন অনিয়মের বিষয়ে মুখ খুলছে নানান পদের কর্মচারীরা। তারা মনে করছে ডাক্তারদের এমন অনিয়ম দুর্নীতির বিরুদ্ধে মুখ খোলার এখনই সময়। কারন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনা ইতি মধ্যে সরকারি সকল দপ্তরের অনিয়ম দুর্নীতির বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষনা করেছেন। করোনার সময়ের কেনাকাটা নিয়ে বাংলাদেশ রেলওয়ের শীর্ষ ২৯ কর্মকর্তার অনিয়মন দুর্নীতির বিষয়ে তদন্ত করে প্রমান পাওয়ায় সাধারণ ভুক্তভোগি কর্মচারীরা মনে করছে এবার দুর্নীতিবাজদের লাগাম টেনে ধরবে এই সরকার।

আরও পড়ুন >>> রাজস্ব আত্মসাৎকারী দুর্নীতিবাজ রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের সিওএস বেলাল বরখাস্ত হচ্ছে

রেলওয়ের চিকিৎসা বিভাগের এমন অভিযোগ উঠায় বিষয়টি অনুসন্ধান করে প্যাসেঞ্জার ভয়েস। অনুসন্ধানের সূত্র বলছে, ২০১৭ সালের ১লা জুন বিভাগীয় চিকিৎসা কর্মকর্তা জুনিয়র নার্স পদে পদোন্নতি জন্য ডিপিও/চট্টগ্রাম এর অধীনস্থ মিডওয়াইফ, ওয়ার্ড এ্যাটেনডেন্ট ও আয়া পদে ৫ বছরের অভিজ্ঞতা আছে এমন ব্যক্তিদের আবেদনপত্র গ্রহন করার নির্দেশ দেওয়া হয়। আবেদনপত্র গ্রহনের পর একই বছরের ২৪ সেপ্টেম্বর ৪ টি শুন্যপদে জুনিয়র নার্স পদোন্নতি প্রদানের পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহনের অনুরোধ করেন প্রধান সংস্থাপন কর্মকর্তা/পূর্ব বরাবরে। পরে ৫ নভেম্বর প্রধান সংস্থাপন কর্মকর্তা/পূর্ব এর পক্ষে জুনিয়র পার্সোনেল অফিসার-১/পূর্ব মোহাম্মদ উল্ল্যাহ ৫৪.০১.১৫০০.১১৪.১৬.১১৫.১৪ স্বারক মূলে বিভাগীয় সংস্থাপন কর্মকর্তাকে জুনিয়র নার্সের ৪টি শূন্য পদে পদোন্নতি দেয়ার অনুরোধ জানান।  এই পর্যন্ত সবকিছু ঠিকঠাক ছিল। 

তবে চোখ কপালে উঠার মতো ঘটনা ঘটেছে ডাঃ ইবনে সফি আব্দুল আহাদ ৫ সেপ্টেম্বর ২০১৮ সালের লিখিত পরীক্ষার তালিকার কপিতে। ১৮ জন ব্যক্তিকে আবেদন গ্রহন করে লিখিত পরীক্ষার জন্য ডাকা হয়েছিল। ১৮ জনের মধ্যে ১৬ জন ওয়ার্ড এটেনডেন্ট পদ থেকে পদোন্নতির জন্য আবেদন করেছেন। ১ জন মিডওয়াইফ ও অন্য জন্য এস/খালাসী। তবে গুরুত্বের বিষয় হচ্ছে আগের স্বারকগুলোর বিজ্ঞপ্তিতে কোথাও এস/খালাসী থেকে পদোন্নতি দিবে বা ৫ বছরের কম অভিজ্ঞাতা আছে এমন ব্যক্তিদের পদোন্নতি দিবে এমন কোন তথ্য প্রকাশ করা হয়নি। এতে ডাঃ ইবনে সফি আব্দুল আহাদের অনিয়মের গন্ধ পাচ্ছে এই বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।  পদোন্নতিপ্রাপ্ত এস/খালাসী ইয়াছিন ভুইয়া সকল নিময় ভেঙ্গেছে।  তবে একটি সূত্র বলছে এই এস/খালাসী থেকে পদোন্নতি দেওয়ার জন্য তিনি মোটা অংকের ঘুষ বাণিজ্য করেছেন। তবে এই বিষয়ে মূখ খুলতে নারাজ এই ডাক্তার কর্মকর্তা। 

জানতে চাইলে প্যাসেঞ্জার ভয়েসকে  ডাঃ ইবনে সফি আব্দুল আহাদ বলেন, ২০১৮ সালে জুনিয়র নার্স পদে পদোন্নতির বিষয়টি সত্য তবে এতে কোন অনিয়ম হয়েছে কিনা তা কাগজপত্র দেখতে হবে। 

তবে তার স্বাক্ষরিত চিঠি প্যাসেঞ্জার ভয়েসের কাছে রয়েছে। তিনি নিজে স্বীকার না করলেও তার স্বাক্ষরিত চিঠি বলছে। এমন বড় একটি অনিয়ম করেছেন তিনি। ২০১৮ সালের ১৮ সেপ্টম্বর জুনিয়র নার্স পদে লিখিত পরীক্ষার উত্তীর্ণ ৮ জন প্রাথীর তালিকায়ও দেখা গেছে এস/খালাসী থেকে আবেদন করা ইয়াছিন ভুঁইয়া নামের এই কর্মচারীর নাম ২য় অবস্থানে রয়েছে। একদিন পরে মৌখিক পরীক্ষায় মেধাক্রম তালিকার ৩য় নম্বরে রয়েছে এই এস /খালাসীর নাম। তবে এই বিষয়ে তখন অনেকে প্রশ্ন তুলেছিল এই এস/খালাসী কিভাবে এত মেধাবী হয়ে উঠলো। তবে পরবর্তীতে গুনঞ্জন উঠে আসে মেধায় নয় মোটা টাকা বিনিময়ে সকল শর্ত ভঙ্গ করেও তিনি ৩য় স্থানে আসেন। ১৯ সেপ্টেম্বরের বিজ্ঞপ্তি অনুয়ায়ী লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষায় উর্ত্তীণ প্রার্থীদের মেধাক্রম অনুযায়ী জুনিয়র নার্স বেতনঃ ৯৭০০-২৩৪৯০/- এনপিএস/১৫ এর শূন্যপদের বিপরীতে পদোন্নতি প্রদানের জন্য সুপারিশ করে ডিএমও চট্টগ্রাম ডাঃ ইবনে সফি আব্দুল আহাদ, ডিপিও চট্টগ্রাম সৈয়দ আব্দুল খলিল, ডিএমও পাহাড়তলী ডাঃ চিন্ময় বিশ্বাস। 

এবার এই পদোন্নতি নিয়ে তৎকালীন বিভাগীয় সংস্থাপন কর্মকর্তা (ডিপিও) সৈয়দ আব্দুল খলিল এর ৮ অক্টোবরের দপ্তরাদেশে রয়েছে আরেক ঘাপলা। পদোন্নতি দেয়া আদেশ এবং শূন্যপদ রয়েছে ৪টি তবে এই কর্মকর্তা পদোন্নতি দিয়েছে ৫ জনকে। পদোন্নতি দেওয়া ৫জন হচ্ছে মিডওয়াইফ থেকে আসা মারজানা আক্তার, ওয়ার্ড এটেনডেন্ট কপিল উদ্দিন, এস/খালাসী মো. ইয়াছিন ভুঁইয়া, ওয়ার্ড এটেনডেন্ট মো. আবু জাফর ও সুদাম নাথ। তবে অনেকে বলছে এস/খালাসী ব্যক্তির বিষয়টি আগে কেউ জানতো না । ৪টি শূন্যপদে মিডওয়াইফ ও ওয়ার্ড এটেনডেন্ট এর চারজনকে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছিল। পরে মোটা টাকা ঘুষের বিনিময়ে এস/খালাসী ইয়াছিন ভুঁইয়ার নাম অতিরিক্ত ভাবে সংযোজন করা হয়েছে। 

আরও পড়ুন >>> ব্যক্তিস্বার্থে অদক্ষ স্টেশন মাষ্টার বদলী করা দূর্বল ডিটিও দিয়ে পরিবহন সচল সম্ভব নয়

তবে বিষয়টি নিয়ে সাধারণ কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বলছে এমন অনিয়ম বন্ধ হওয়া দরকার। তাই সাম্প্রতিক সময়ে দুদক রেলওয়ের বেশ কয়েকজন কর্মকর্তার অনিয়ম দুর্নীতির অনুসন্ধান করলেও এবার রেলের প্রধান চিকিৎসা কর্মকর্তাও দুর্নীতির অনুসন্ধান চালানো দরকার। 

তবে বাংলাদেশ রেলওয়ের পশ্চিমাঞ্চলে এমন ডজন খানেক অনিয়ম দুর্নীতির প্রমান হওয়ায় ২০১৯ সালের ৯ অক্টোবর এক আদেশে প্রধান সহকারী এএমই/আইসি/সিএনড ডাব্লিউ/ লালমনিরহাট মো. আনোয়ার হোসেনকে পদাবনিত করে অফিস সহায়ক এমএলএসএস করা হয়, এছাড়া অফিস সহকারী-কাম-কম্পিউটার মূদ্রাক্ষরিক ডিটিএস লালমনিরহাট মো. কামরুল হাসানকে পদাবনিত করে অফিস সহায়ক এমএলএসএস, মো. নাজমুল আবেদীন অফিস সহকারী-কাম-কম্পিউটার মূদ্রাক্ষরিক কে ডিসেপন্সারী ক্লিনার/ পরিচ্ছন্নতা কর্মী পদে পদাবনিত করেছে। এমন ঘটনার পরেও সচ্চতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে পূর্বাঞ্চলের এমন সিদ্ধান্ত এখনও পর্যন্ত নেয়নি কোন শীর্ষ কর্মকর্তা। 

এদিকে দুর্নীতি দমন কমিশন দুদকের কর্মকর্তারা বলছে রেলের নিয়োগ ও পদোন্নতি বাণিজ্য গুলো সকল কর্মকর্তার যোগসাজসে হয়ে থাকে । ফলে কার দোষ কে ধরবে।

আরও পড়ুন >>> রেলের মালামাল ক্রয়ে দুর্নীতিতে জড়িত চট্টগ্রামের সিওপিএস শাহনেওয়াজ

আরও পড়ুন >>> রেলের কেনাকাটায় হরিলুট: কব্জির জোরে বহাল দুর্নীতিবাজরা

আরও পড়ুন >>> ওয়ারলেসে বৈধতার দোহায়ে অবৈধ দখল, ঘুমন্ত রেলের কর্তারা